- কালিদাসের একটি ছোট গল্পকালিদাসের রচনাবলীর মধ্যে আমাদের কাছে দুটি গ্রন্থ সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এর মধ্যে আজ থেকে প্রায় দেড়শো বছর আগে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর গল্পের আকারে ‘শকুন্তলা’ লিখেছিলেন ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ থেকে ভাবানুবাদ করে। আর অন্যটি হচ্ছে ‘মেঘদূতম’ বা ‘মেঘদূত’। বাংলায় এ পর্যন্ত বহুজন এই ছোট্ট কাব্যগ্রন্থটির অনুবাদ করেছেন। সংক্ষিপ্ত হলেও এটিই তার অমর কীর্তি; তার শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে স্বীকৃত। ‘মেঘদূতে’র বিষয়বস্তু নিয়ে হায়াৎ মামুদ লিখেছেন,
ছোট একটি গল্প, এবং একেবারেই বিশ্বাস করার মতো নয়। কুবের নামে কোটিপতি এক লোকের বাড়িতে চাকরি করে এক যক্ষ। গৃহভৃত্যটির নাম পর্যন্ত বলা হয়নি। ‘যক্ষ’ হলো লোকটির জাত-পাতের পরিচয়- যেমন জেলে, কুমোর, রাঁধুনি ইত্যাদি। যক্ষ বিয়ে করেছে সবেমাত্র। নতুন বৌ, ঘরসংসার গোছগাছ করায় যক্ষ ব্যস্ত। এর ফলে চাকরির কাজে বেচারার ত্রুটি ঘটতে লাগল। তখন রেগেমেগে কুবের তাকে শাস্তি দিল। তারা ছিল অলকাপুরীতে। অলকাপুরী হলো মানসসরোবরের কাছে কৈলাস পর্বতে এক শহর।
কুবের তাকে সোজা পাঠিয়ে দিল রামগিরি পাহাড়ে। প্রথমত, অত্যন্ত দূর। কেননা উত্তর প্রদেশের দক্ষিণাংশ ও মধ্যপ্রদেশের সংযোগস্থলে এর অবস্থান। দ্বিতীয়ত, জায়গাটি পাহাড়ি ও অরণ্যাঞ্চল। রাজধানী থেকে এসে এরকম বুনো জায়গায় একটি বৎসর একা একা নির্বাসনে থাকবে যক্ষ- এটাই তার শাস্তি। এর মধ্যে দশ মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে, মাত্র দুটি মাস বাকি, তার পরেই সে ফিরে যেতে পারবে রাজধানী অলকাপুরীতে।
কিন্তু এরই মধ্যে এসে গেল আষাঢ় মাস। বর্ষা কাল। মেষের সে কী নয়ন-ভোলানো মনমাতানো রূপ! সমস্ত পর্বত ও অরণ্যানী নতুন সাজে সেজে উঠেছে যেন। দশটা মাস তার কোনো কষ্ট হয়নি, হঠাৎ এখন বাড়ির জন্য এমন মন কেমন করতে লাগল যক্ষের যে সে যেন পাগল হয়ে যায়। নববধূর জন্য কষ্ট হতে লাগল, শহুরে জীবনের আমোদ-আহ্লাদের জন্য শোক উথলে উঠল। তার ভয় হয়, বেচারি অভাগিনী বৌটি বেঁচে আছে তো। যক্ষ বেঁচে নেই ভেবে সে-ও যদি দুঃখ-শোকে মরে গিয়ে থাকে! সেকালে তো আর ডাকব্যবস্থা ছিল না যে যক্ষ স্ত্রীকে চিঠিপত্র লিখবে। কী করে এখন! হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়। আচ্ছা, মেঘ তো উড়ে উড়ে দেশ-দেশান্তরে যায়; যদি মেঘকে অনুনয়-বিনয় করে বলি যে, ‘ভাই মেঘ, তুমি আমার খবরটা আমার স্ত্রীকে একটু পৌঁছে দিয়ে এস’, তো সে যাবে না?