স্বাধীনতার কয়েক বছরের ভিতরে শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার নিপীড়নের প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধে ফেরত ব্যক্তিরা একটি রাজনীতল গঠনকরে। সে দলটির নাম ছিল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদ।
ছাত্রলীগের পরিবর্তে এ সংগঠনের ছাত্র সংগঠনের নাম হয় জাসদ ছাত্রলীগ। সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জাসদ ছাত্রলীগের তৎপরতা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায়, যা ছিল এদেশে নতুন ধারার রাজনীতি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সে সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জাসদ ছাত্র রাজনীতির গোড়াপত্তন ঘটে , সে সময়কার এক ছাত্র নেতার মিনি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করলাম, তিনি হচ্ছেন মো. মুজতবা কামাল।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জাসদ ছাত্রলীগ সভাপতি ছিলেন, চবি শাহ আমানত হলের প্রথম জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন। ,তার নিজগ্রাম: চৌপল্লী, থানা+জিলা- লক্ষ্মীপুর।
প্রাথমিক শিক্ষা- মিরপুর আপগ্রেড উচ্চবিদ্যালয়
বর্তমানে যা মিরপুর হাইস্কুল নামে পরিচিত।
জন্ম ২৯ নভেম্বর ১৯৫৮ সাল। ছয় ভাইবোনদের মধ্যে সর্বশেষ তিনি। পিত কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, মাতার নাম আমেনা বেগম, ১৯৭৩ সালে লক্ষ্মীপুর হাজীর পাড়া হামিদিয়া হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি শেষ করেন এবং ১৯৭৬ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বছর সমাজতত্ত্ব বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন।
১৯৮৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জাসদ ছাত্রলীগ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৭৯ সালে শাহ আমানত ছাত্র আবাসিক হলে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথম জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৮১, ৮২, ৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, লক্ষ্মীপুর কলেজে অধ্যায়নকালে তৎকালীন সরকারী দলের নির্যাতন, নিপীড়ন তখনকার দিনের প্রধান বিরোধীদল জাসদ রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৭৬ সালে যখন তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তখন চাকসুর ভিপি ফজলুল হক ও জিএস গোলাম জিলানী চৌধুরী ছিলেন। গোলাম জিলানী চৌধুরী জাসদ ছাত্র রাজনীতির সক্রিয় নেতা ছিলেন। আমরা তার অনুসারী ছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের।
- মাহমুদুর রহমান মান্নার মতাদর্শে জাসদ ছাত্রলীগ গোডাপত্তন ঘটে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ১৯৬৮ সালে ছাত্রলীগ এর আহ্বায়ক হন। ১৯৭২ সালে চাকসুর জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৬ সালে জাসদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি। ১৯৭৯ সালে ঢাকায় এসে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে তিনি বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ গঠন করেন। ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় হয়ে পড়েন।
মুজতবা নিজের কথা বলতে গিয়ে বলেন মূলত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন জাসদ রাজনীতির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এই বাম ধারার রাজনীতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জীবনে রাজনীতির ক্ষেত্রে অনেক প্রত্যাশা ছিল। শোষণ নিপীড়নের অত্যাচার থেকে বাঁচতে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলাম। কিন্তু সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি। যে লক্ষ নিয়ে রাজনীতিতে আসা শিক্ষাজীবন শেষ করে বাস্তব জীবনে এসে অনেকটা জিমিয়ে পড়েন। রাজনীতির প্রত্যাশা অনেক কিন্তু প্রাপ্তি গৌণ। বর্তমান রাজনীতিবিদদের আচার- আচরণে নৈতিকতা ও ন্যায়বোধহীন রাজনীতির ধারা চলছে। এখান থেকে বাঁচতে ইসলামী মূল্যবোধে রাজনীতি কিছুটা ঝুকেছি। তবে এখন দৃশ্যমান নই। পুরোনো ভাব ধারার রাজনীতি এখনো আমাকে বিচলিত করে। বিভিন্ন পেশা ভিত্তিক সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পরিষদ (এ্যালামনাই) সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছি। চাকসুর সাবেক জিএস গোলাম জিলানী চৌধুরী ২০১৬ সালে এই সংগঠনের উদ্যোগ নিলে আমিও সক্রিয় হই। এখনো এই সংগঠনের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গোলাম জিলানী চৌধুরী আকস্মিক মৃত্যুতে আমরা বিহ্বল হয়ে পড়ি। এখনো সংগঠন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছি।
আমাদের লক্ষীপুরে বংশের পিতামহ শাহীন উদ্দিন পাটোয়ারীর স্মরণে একটি ফাউন্ডেশন গঠন করি। ঐ সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। চট্টগ্রাম ক্রীড়া সংগঠন মোহামেডানের সাথে জড়িত। তার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি। বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হবে এটা আমার প্রত্যাশা। যেখানে গণতন্ত্র, সাম্য, সামাজিক ন্যায় বিচার মানবিক মূল্যবোধ চর্চা হবে। আধুনিক বিশ্বে একটি মডেল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠবে এমন প্রত্যাশা নিয়ে রাজনীতির সংশ্লিষ্ট ও চিন্তার চর্চা করি।সম্পাদনায় আব্দুল্লাহ মজুমদার।