জ্যেষ্ঠ নাগরিক ও বর্ষীয়ান শিক্ষক অলক দাশগুপ্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচ- এর সৌভাগ্যবান ছাত্র। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বছর ১৯৬৬ খৃষ্টাব্দের ১৮ নভেম্বর প্রথম ক্লাস শুরু হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ক্লাসের প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন অলক দাশগুপ্ত। মাস্টার্স প্রিলির ছাত্র জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, চারটি বিভাগ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল, বাংলা, অর্থনীতি, ইতিহাস ও ইংরেজি বিভাগ। প্রতিটি বিভাগে ৪০ জন করে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়। সেসময় অনেক পুরানো ছাত্র যারা ডিগ্রী পাস করছে কয়েক বছর আগে তারাও প্রিলিমিনারি মাস্টার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। ১৯৬৬ খৃষ্টাব্দে চবির প্রথম উপাচার্য ছিলেন ড. এ আর মল্লিক। অলক দাশগুপ্ত ছিলেন অর্থনীতির ছাত্র। সে সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন এস এম এ আতাহার। তাঁর গ্রামের বাড়ী ছিল সন্দীপ।
অলক দাশগুপ্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র, চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ১৯৬৬ খৃষ্টাব্দে বিএ পাস করার পর একই বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্র হয়েছিলেন। চট্টগ্রামের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনেক অনিয়মিত ছাত্ররা মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছিলেন। চ’বির চারটি ডিপার্টমেন্টে ৬ জন করে ছাত্রী ছিল। অবাঙালিরা সেলোয়ার কামিজ পরতেন বাঙালি মেয়েরা শাড়ি পরতেন। বোরকা পরে কেউ বিশ্ববিদ্যালয় আসতেন না, কোনো হিজাব পরতেন না সে সময়। বলতে গেলে হিজাবের প্রচলনও ছিল না। তিনি প্রিলি পাস করার পর রাজনীতিবিজ্ঞানে প্রিলিমারিতে ভর্তি হন। ১৯৬৮ খৃষ্টাব্দে মাস্টার্স পাস করে বের হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
পরিবহণ সুযোগ- সুবিধা বলতে তেমন ভালো কোনো সুবিধা ছিল না তৎকালীন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহনের মাধ্যম ছিল, মুড়ির টাংকি গাড়ী। নগরীর সিনেমা প্যালেস থেকে সকাল ৭টা, ৭.১৫ মিঃ, ও ৭.৩০মিঃ এর সময় মোট তিনটি গাড়ি ছেড়ে যেতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর উদ্যেশ্যে । হাটহাজারী- নাজিরহাট লাইনের গাড়ী ছিল এগুলো। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় চলতো পরিবহণগুলো । ছাত্র-ছাত্রীরা নিজস্ব ভাড়া ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাতায়াত করতেন। ভাড়া ছিলো ৯ পয়সা । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরার সময়ে গাড়ি না পেলে ভিসি ড. মল্লিক মহোদয় অনেক সময় ছাত্রছাত্রীকে নিজের গাড়িতে করে শহরে নিয়ে আসতেন। অলক দাশগুপ্ত আরো জানান, সে সময় ছাত্রশিক্ষকের সম্পর্ক ছিল খুবি মধুর। ব্যবস্থা ছিলো শিক্ষা সফরে যাওয়ার, পিকনিক আয়োজনের। একবার আমরা ডিপার্টমেন্টে থেকে কাপ্তাই পিকনিক করতে গিয়েছিলাম।
১৯৪৮ খৃষ্টাব্দের ১ মার্চ বোয়ালখালীর কদুরখীলে সুধাংশু বিমল দাশগুপ্তের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন অলক দাশগুপ্ত। তিনি কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে বি. কম করেন, সে সময় “আর এ” পাস করেন ( যা বর্তমানে সি এ বলা হয়)।
অলক দাশগুপ্ত তার ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে বলেন, প্রথম জীবনে স্কলারের জীবন শুরু করেন, তারপর শিক্ষকতা পেশার ইতি টানেন। পরে বিসিএস পাস করে প্রশাসনের ক্যাডার হতে চেয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হলে পরবর্তীতে সামরিক শাসন আমলে রূপালী ব্যাংকে চাকরি নিতে বাধ্য হন তিনি। সবশেষে রূপালী ব্যাংকে চাকরি শেষ করে তিনি অবসরে যান। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পরিষদের অন্যতম সদস্য।
পারিবারিক জীবনে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। ছেলে সুদীপ্ত দাশগুপ্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেে (সিটিজেনে) প্রবাস জীবন যাপন করছেন। মেয়ে ডাক্তার সুতপা দাশগুপ্ত দেশের স্বনাধন্য একটি এনজিও সংস্থায় কর্মরত।
রাজনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্র ভাবনা নিয়ে তিনি জানালেন, ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন পরবর্তীতে তিনি ছাত্রলীগে যোগদান করেন। দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও দাবী করেন এই প্রবীণ শিক্ষক ও ব্যাংকার। তিনি বলেন, সমাজও মানুষের চাহিদার পরিবর্তণ ঘটেছে এগিয়ে যাচ্ছে।
অনু সম্পাদক – আবদুল্লাহ মজুমদার