উত্তর কাট্টলী মৌজায় ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৩০ ফুট প্রস্থের অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় নির্মিত এই অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে এবারও বিজয় দিবসের শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকার সাভারের আদলে চট্টগ্রামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিলেও তা আর বেশি দূর এগোয়নি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে আলোচনা হলেও নকশা চূড়ান্ত হয়নি। চট্টগ্রাম নগরীতে একটি শহীদ মিনার থাকলেও কোনো স্মৃতিসৌধ নেই। সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় পুরোনো শহীদ মিনার ভেঙে নতুন শহীদ মিনার করা হলেও সেটি দৃশ্যমান নয়– এ অভিযোগ তুলে এ বছরও সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন থেকে বিরত থাকছেন সুশীল সমাজের সঙ্গে প্রশাসনও।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের ৫৩ বছর পর নগরীর পতেঙ্গা মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে পাহাড়তলীর উত্তর কাট্টলী মৌজায় ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৩০ ফুট প্রস্থের অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় নির্মিত এই অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে এবারও বিজয় দিবসের শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) কামরুন নাহার সমকালকে বলেন, চট্টগ্রামে একটি স্থায়ী স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখনও নকশা করা হয়নি। কয়েক দিন আগে মন্ত্রণালয়ের একটি সভায় উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীরপ্রতীক এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। জেলা প্রশাসন থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা এলে সেই মোতাবেক পরিকল্পনা করে স্মৃতিসৌধ নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, চট্টগ্রামে স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণে নেওয়া উদ্যোগটি চলমান। এ নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজ করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসন পাহাড়তলীর উত্তর কাট্টলী মৌজায় পরিবেশ বিধ্বংসী চারটি অবৈধ ইটভাটা ধ্বংস করে সরকারি ৪৫ একর জায়গা দখলমুক্ত করে। এর মধ্যে ৩০ একর জমিতে ২০২৩ সালে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তখন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে চট্টগ্রামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কথা বলে। এর আগে ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর উত্তর কাট্টলীতে স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল।
স্থানীয়রা জানান, মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের অবদান অনন্য। চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে নৌ-কমান্ডোরা চট্টগ্রাম বন্দরকে অচল করে দেয়। সেটি ছিল যুদ্ধের সময় একটি মাইলফলক। কিন্তু দুঃখের বিষয়, চট্টগ্রামে স্মৃতিসৌধ, স্মৃতিস্তম্ভ ও মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের দাবির আলোকে এখানে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু তারপর দুই বছর কেটে গেলেও স্থায়ী স্মৃতিসৌধ, স্মৃতিস্তম্ভ ও জাদুঘর নির্মাণে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে এবারও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বিজয় দিবসের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে। এ ছাড়া জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম সরোয়ার কামাল বলেন, মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম অঞ্চলের অবদান অন্য এলাকার চেয়ে বেশি ছিল। অপারেশন জ্যাকপট চট্টগ্রাম বন্দরকে অচল করে দিয়েছিল। শহীদদের স্মরণীয় করে রাখতে চট্টগ্রামে স্থায়ী স্মৃতিসৌধ করতে হবে।
চট্টগ্রাম নগরীর কাট্টলী স্মৃতিস্তম্ভে মেয়র শাহাদাত হোসেনের শ্রদ্ধা নিবেদন