মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম:দেশজুড়ে এক আবেগঘন আলোড়ন—এটি শুধু একজন মায়ের মৃত্যু নয়, বরং একটি দৃশ্য যা বলছে: নতুন বাংলাদেশে নতুন কিছু ঘটছে।
গত ১১ জুন রাতে মায়ের মৃত্যুর খবরে চার ঘণ্টার প্যারোলে মুক্তি পান কারাবন্দি সাংবাদিক দম্পতি ফারজানা রূপা ও শাকিল আহমেদ। রাত সাড়ে আটটার দিকে ময়মনসিংহের নিজ গ্রামে যখন তাঁরা মায়ের মরদেহের পাশে দাঁড়ান, তখন ফারজানার হাতে ছিল না কোনো হাতকড়া। এই একটি দৃশ্য যেন বাংলাদেশের বিচার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত দেয়।
অতীতের চিত্র: নারীর গায়ে হাতকড়ার ইতিহাস
আওয়ামী লীগ আমলে নারী হাজতিদের ক্ষেত্রে এমন মানবিকতা ছিল প্রায় অদৃশ্য। বরং হাতকড়া যেন হয়ে উঠেছিল রাষ্ট্রীয় শক্তির প্রতীক। যেমন:
-
ফারিয়া মাহজাবীন (২০১৮): তথ্যপ্রযুক্তি মামলায় গ্রেপ্তারের সময় তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে আনা হয়।
-
রোজিনা ইসলাম (২০২১): অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকে রেখে পরে হাতকড়া পরানো হয়, যা ব্যাপক নিন্দার জন্ম দেয়।
আজকের দৃশ্য: পরিবর্তনের ইঙ্গিত?
রূপার পাশে ছিলেন স্বামী শাকিল, যার হাতে একটি হাতকড়া ছিল, কিন্তু রূপার ক্ষেত্রে ছিল সম্মান ও সহানুভূতির আচরণ। স্থানীয়রা জানান, পুলিশ কোনো অপমানজনক আচরণ করেনি।
প্রতীকী মুহূর্ত, প্রতীকী বার্তা
এটি শুধু একটি প্যারোল মুক্তির ঘটনা নয়—বরং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সাংবাদিকতা, মানবতা ও নারীর মর্যাদার প্রতি নতুন মনোভাবের প্রতীক।
এক সময় যেখানে নারীর গায়ে হাতকড়া ছিল ‘শাস্তি’, আজ সেখানে একজন মায়ের চোখের জলকে বলা হচ্ছে ‘সম্মানযোগ্য’। পরিবর্তনের এই ইঙ্গিত সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।
শেষ বিদায়ের সেই মুহূর্ত
মাত্র এক ঘণ্টার জন্য মুক্তি পেয়েও রূপা ও শাকিল যেন কাটিয়ে গেলেন এক অনন্ত সময়। কবরের পাশে দাঁড়িয়ে একসাথে প্রার্থনায় ভেঙে পড়েন তারা—একটি দৃশ্য, যা ভাষার বাইরে গিয়েও অনেক কথা বলে।
মিডিয়া ও মানবাধিকার কর্মি