চব্বিশের ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট মোড়ে সমাবেশ করে ছাত্র–জনতা।সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল ষোলশহর অতিক্রম করে বহদ্দারহাটের দিকে অগ্রসর হয়। ওই বিক্ষোভ মিছিল বহদ্দারহাট মোড় থেকে চান্দগাঁও থানার দিকে এগোচ্ছিল, বাড়াইপাড়ার সিটি মেয়র এম রেজাউল করিমের বাসভবনের গলিমুখে তাদের পথ রোধ করে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। শুরু হয় গুলি। সন্ধ্যা সাড়ে সাত’টার দিকে শহিদুল গুলিবিদ্ধ হন। সহযোদ্ধারা তাকে নিয়ে যান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ব্যান্ডেজ করে বলা হয়—এখানে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ, পুলিশ ধরে ফেলতে পারে। তাই নেওয়া হয় পার্কভিউ হাসপাতালে। কিন্তু সেখানেই রাত সাড়ে দশটায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শহিদুল।ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শহীদুলের স্ত্রীর খোসনে আরা বেগম বলছিলেন—”ওইদিনই আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেল।”
তিনি জানান,ঘটনার দিন দুপুরের খাবার খেয়ে বের হয়ে যায়।তখন মৌলবী পুকুরপাড় এলাকায় একটা বড় মিছিল বহদ্দারের দিকে যাচ্ছিলেন বলে উঠলো সে মিছিলে যাবে এবং আমি পিছনে পিছনে ছুটলাম তাকে বারণ করার চেষ্টা করলাম ।সে থামলো না সে ছুটে গেল মিছিলে । এর আগেও একটানা ছয়দিন মিছিলে গেছে।রাতে সে বলতো কোথায় মিছিল হয়েছে। কোথায় কারা মারা গেছে এসব বলতো এবং সে বলতো দেশবাসীর মুক্তির জন্য হাসিনার পতন হওয়া উচিত।
শহিদুল ইসলাম(৩৭)চট্টগ্রাম রিয়াজ উদ্দিন বাজারে একটি জুতা দোকানে সেলসের চাকরি করতেন। স্বামী স্ত্রীর দুজনের একটা ছোট্ট সংসার মৌলভী পাড় পুকুরপাড় একটি বস্তি এলাকায় থাকেন।স্বামীর মৃত্যুর পর শহিদুল স্ত্রী খোসনে বেগম খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছেন।শহিদুল বিয়েকে তার পরিবার মেনে নেয়নি । গত ৫ বছর ধরে ভাড়া করে বসবাস করে আসছিলেন।
তার স্ত্রী জানান, শহিদুলের নিহতের পরদিন ৪ আগস্ট বিকেল চকবাজার রসুলাবাদ খাল পাড়ে সামাজিক কবরস্থানে তার দাফন হয়।তিনি শহীদুলের মৃত্যুর পর পিতামাতা সাথে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা তাকে বের করে দিলে আগে ভাড়া ঘরে চলে আসে।যে ঘরে স্বামীর সাথে ৫ বছর কাটিয়েছেন।শহীদুলের সাথে অনেক স্মৃতি। তার মৃত্যুর এই দুজনের ছবি তোলে। সে ছবিটি বাইন্ডিং করে দেয়ালে সাঁটিয়ে দেয়।সে বলে এই ছবি যত্ন করে রাখবে।
যে ভাবে পরিচয় হয়:শহিদুলের শাশুরবাড়ী কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়ন। তার স্ত্রী খোসনে আরার আগে একবার বিবাহ হয়েছিল । সে ঘরে এক পুত্র সন্তান রয়েছে। তার প্রথম স্বামী সময় মালেশিয়ায় যাবার সময় নৌডুবিতে মৃত্যু হয়।তিনি তিন মাসের শিশু সন্তান নিয়ে গার্মেন্টসে চাকরির আশায় চট্টগ্রাম চলে আসে। বাস টার্মিনালে পরিচয় ঘটে শহিদুলের সাথে।সে থেকে তাদের প্রনয়।২০২০ সালে তাদের বিবাহ হয়।
শহিদুলের মা বাবা বিয়েটি মেনে নেয়নি। সে কারণে আলাদা ভাড়া ঘরে সংসার পাতে শহিদুল ও খোসনে আরা বেগম। তাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়।মাত্র সাতমাস বয়সে তার মৃত্যু হয়।খোসনে আরা বেগম জানান,তিনি কিডনি রোগে ভুগছেন। অপারেশন হয়েছে।জুলাই ফাউন্ডেশন সহযোগিতা পেয়েছে।সে টাকার কিছু অংশ শাশুরবাড়ীর লোকজন নিয়েছে।বাকীটা নিজের চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে। এখন তেমন টাকা নেই হাতে ।সংসারের একমাত্র উর্পাজনকারী ছিলেন তার স্বামী। তিনি নেই এ কথা ভাবতে তার খুব অসহায় লাগে।
নিহতে পরিচয়, শহিদুল ইসলাম ছিলেন রফিকুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্র। তার পরিবার থাকেন চকবাজারের রসুলাবাদ এলাকায়। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে শহিদুল ছিলেন সবার ছোট। মাতা শামসুন্নাহার একজন গৃহিণী। অনগ্রসর পরিবারের সন্তান লেখা পড়া তেমন আগােয়নি।
চব্বিশের ২০ আগস্টনগরে চান্দগাঁও থানায় নিহতের বড় ভাই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।মামলার আসামিরা হলেন চান্দগাঁও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন ফরহাদ, সিটি কলেজ ছাত্রসংসদের ভিপি মো. তাহসিন, যুবলীগকর্মী জাফর, মোহাম্মদ ফরিদ, এইচ এম মিঠু, মোহাম্মদ জালাল, মোহাম্মদ দেলোয়ার ও মোহাম্মদ ফিরোজ। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪০ জনকে আসামি করা হয়।