দুধের বালক — শুধু কাব্যগ্রন্থ নয়, মানব জীবনের সরলতার এক প্রতিচ্ছবি
নূরনাহার নিপা
দুধের বালক – আবদুল্লাহ মজুমদারের প্রথম কাব্যগ্রন্থ হলেও বিভিন্ন স্বাদের কবিতায় অসাধারণ দক্ষতায় নির্মাণ করেছেন। তাঁর স্বপ্নের করিডোরে বাস্তবতার চিত্রগুলো চমৎকারভাবে ফুটে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। বিষয়ে, ভাবে – কল্পনায়, শব্দে- ছন্দে, প্রকাশ-নৈপুণ্যে অসামান্য তাঁর প্রতিটি কবিতা। প্রথম কাব্যগ্রন্থ হলেও লেখক হিসেবে তিনি নবীন নয়। বিষয় বৈচিত্র্যে সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন, কবিরা স্বপ্নকে জীবনে আর জীবনকে স্বপ্নে রূপান্তরিত করার খেলায় মেতে থাকেন। তাঁর কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতায় যাপিত জীবনের ঘটে যাওয়া চিত্রের একটি স্পাই, তাঁর কবিতায় উঠে এসেছে – যাপিত জীবনের বাস্তবতা, প্রকৃতি, দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, বিরহ , সংগ্রাম- চেতনা, দ্রোহ, সরলতা, সাবলীল ভাষার প্রতিটি কবিতা নির্মাণ করেছেন মনের সুন্দর ভাবনা দিয়ে কোনো জঠিলতা নেই। যা পড়ে পাঠক মুগ্ধতা অনুভব করবে।আমি নিজেও পাঠে তৃপ্ত।
দুধের বালক – বিশ্বাস করে দেখো শুধু একবার বড়জোর ঠকবে!/ এর বেশি তো নয়, মানুষ তো চিনতে পারবে! / ঠকতে শিখেছি, ঠকাতে নয়/ আজন্ম শিখে যাচ্ছি দুধের বালকের মতো/
কৃতজ্ঞতা ভুলে গেছো,ভুলে গেছো ঋণ/ বিশ্বাসের কাছাকাছি কিছু নেই বলে দুধের বালকের মতো কাটছে দিন /কবিতাটিতে কবি – সৎ জীবন যাপন করা মানুষগুলোকেই আদতে দুধের বালক বুঝাতে চেয়েছে । তা পাঠকদের কাছে তুলে ধরেছেন অনায়াসে পাঠক মোহিত না হয়ে পারেন না।
করোনার প্রোফিল্যাকটিক মেডিসিন আর্সেনিক এলবম
নিয়ে লিখছেন, ক্লিনিক্যাল বায়োগ্রাফি। অসাধারণ কবিতাটিতে করোনার আর্সেনিক আয়োড – এর লক্ষণের ধাবিত সময় তুলে ধরেছেন।
কৃষ্টি কালচার- সভ্যতা শিখে জন্মায় না কেউ, শিখে ধরণিতে /কৃষ্টি-কালচার শিখে মানুষ গ্রীষ্ম- বর্ষা, শীতে/রৌদ্র শুকায়, ভেজে বৃষ্টিতে/ শীতে ঠোঁটের ধস/ দেহ নয় মনকে বলো, কিছু শিখ বস/ কবিতাটিতে নিসর্গ ভাবনার নিখাদ প্রতিচ্ছবি।
নারীতত্ত্ব- আমি জানি, আবার জানি না / কীভাবে রমণীর গর্ভে নবজাতকের জন্ম / কিংবা জারজ সন্তানের পৃথিবী দেখা আমি জানি / টাকা আর নারী যার কাছে যায় তার-ই/ কবিতাটিতে কবি পাপ পঙ্খিলতাকে দূরে ঠেলে দিতে পারে তবুও পুরুষ, নারী মগ্ন পরকীয়ায়। কিভাবে একজন জারজ সন্তানের পরিচয় বিহীন পৃথিবীতে কে তার বাবা “মা “নারীতত্ত্ব তা প্রকাশ করেছে কারুকাজে বাক্যবিন্যাসে সমাজের সত্যটুকু যা পাঠকের কানে অনুরগন তোলে। যা জীবনের সময়কে নির্দেশনার অভিনয় করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। “নগরীর করোনা – কবিতায় কবি কি চমৎকারভাবে করোনার প্রভাব বিস্তারকে তুলে ধরেছেন। রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকরা করোনাকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, ঠিক সে কথাগুলো কবিতাকারে লিপিবদ্ধ করেছেন পাঠকের জন্য। “সূর্যের আলো আসার আগে নগরী থেকে/ পালিয়ে যায় করোনা /সন্ধ্যায় সর্বশক্তি নিয়ে ফিরে। করোনা নিয়ে আরো কয়েকটি কবিতাও দুধের বালক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। করোনার ঈদ কোভিড-১৯, করোনার বান, করোনাকাল ও মউ ও অথচ কথা ছিলো। অথচ কথা ছিলো এ কবিতার শিরোনাম দেখে যদিও অন্যকিছু ভাবনায় আসে পাঠক হৃদয়ে।
কবির প্রতিবাদী ভাবনাগুলোই মূলত কবিতার পান্ডুলিপিতে এঁকেছেন। সমাজের নানা অনিয়মের চিত্র। যেমন মদদপুষ্ট কবিতায় লিখেছেন- নীতিকথা বাদ দিয়ে দাও/ দুর্নীতিতে ডুবে আছি/ কারাগারের ভয় করি না/ক্ষমতাসীন নিয়ে বাঁচি।
নিজের বলতে কিছু নেই – কবিতায়,- দ্যাখো, মনটাও সবসময় অন্যের কথা ভাবে/ আর শরীর? /নাহ, তাও নয়,
পায়ের নখ থেকে চুলের অগ্রভাগ অবধি/ যা কিছু নিজের বলে দাবি করি/ এই হাত-পা-ও একদিন মাটি হয়ে যাবে।’ নিরেট সত্যি কথাগুলোই কবিতার পঙক্তিতে সাজিয়েছেন কবি।
বৃষ্টি ও সুমনা- বৃষ্টি এলে বড্ড মিস করি, সুমনা /যেদিন থেকে বৃষ্টির সাথে অদ্ভুত সম্পর্ক /তোমার। সেদিন থেকেই! / বৃষ্টিকে বলতে পারি না এসো না/ তোমাকে বলতে পারি।বৃষ্টির সাথে চলে এসো/মিস করতে চাই না আর,,, এভাবেই আবেগ মাখা কথাগুলো পাঠকের জন্য সন্নিবেশিত করেছেন তার প্রায় প্রতিটি কবিতায়।
চট্টগ্রামের নন্দিত সংগঠক ও লেখক আবদুল্লাহ মজুমদার ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে আজাদীতে লেখা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাঁর লেখালেখি শুরু। জাতীয় দৈনিকগুলোতেও মাঝেমাঝে লিখতেন। চট্টগ্রাম শহরে তাঁর জন্মগ্রহন ও বেড়ে ওঠা। রয়েছে যথেষ্ট মানবিক বোধ। তিনি একজন পরোপকারীজন। সাহিত্যজগতে কবির বিচরণ আরো সরগম হোক। সুন্দর মনের ভাবনা সৃষ্টিতে বিকশিত হোক পাঠক হৃদয়। কবি ও কবিতার জয় হোক। বইটি পাঠকপ্রিয়তা পাবে এই প্রত্যাশা। দুধের বালক কবিতাগ্রন্থ পাওয়া যাচ্ছে শব্দশিল্প প্রকাশন, কথন প্রকাশন ও বুকশপ বাতিঘরে ।
লেখক- আবদুল্লাহ মজুমদার। কবিতাগ্রন্থ – দুধের বালক। মুল্য-১২৩। প্রকাশক- লাবীবা প্রকাশন