নেই চামড়ার ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা। ছিলোনা তা সংরক্ষণ করারও। নেই এসব ব্যবায়িদের যথেষ্ট পুঁজিও। সিন্ডিকেট করে কমদামে চামড়া কেনেন তারা। এসব মৌসুমি ব্যবসায়িদের চামড়া কেনার কৌশলের ফাঁদে পড়ে পেশাদার চামড়া ব্যবসায়ি চামড়া কেনারও আগ্রহ হারায়। শনিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরের গুরুত্ব পয়েন্ট থেকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় চামড়া কিনেন কয়েক লাখ। পরে চামড়ার আতৎদারের কাছ থেকে মূল্য না পাওয়া ও তা সংরক্ষণের অভিজ্ঞতা না থাকায় রাস্তায় ফেলে চলে গেছেন বেশির ভাগই।
এতে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পেশাদার ব্যবসায়িরা, অন্যদিকে যত্রেতত্রে চামড়া ফেলে যাওয়ায় দুগন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে নগরের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়কগুলো। একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে এই বছর চামড়া ব্যবসা নিয়ে নতুন চিন্তা ছিলো, সেটি ভুলন্ঠিত হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারকে বেকাদায় ফেলার জন্য মূলত এমন কৌশল করেছেন একটি সিন্ডিকেট। তারা চামড়ার আতৎদারের সঙ্গে কোনো ধরনের পূর্বের যোগাযোগ ছিলো তাদের। চামড়া সংরক্ষণের অভিজ্ঞতা না থাকায় চামড়া নস্ট করে বাধ্য হয়ে উল্টো ফেলে চলে গেছেন এসব মৌসুমি চামড়ার ব্যবসায়ি।
শনিবার (৭ জুন) রাত ১২টা পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রাকে ট্রাকে চামড়া নিয়ে চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ এলাকায় আড়তের সামনে বিক্রির জন্য অপেক্ষায় ছিলেন অনেক ব্যবসায়ি। দুপুর বারটায়ও ট্রাকে ৫০ হাজারের বেশি চামড়া বিক্রির অপেক্ষায় আছে। গরুর চামড়ার ভেতরে ছাগলের চামড়া কেনার তেমন আগ্রহও নেই আড়তদারদের। অনেক ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে না পেরে নষ্ট হয়ে গেছে।
রোববার (৮ জুন) দুপুর বারটার দিকে সরেজেমিনে গিয়ে ঘুরে দেখা গেছে, আগ্রাবাদ চৌমুহনি, চকবাজার, বহদ্দারহাট, বায়েজিদ, অক্সিজেন, ইপিজেড ও পতেঙ্গার অলিগলিতে পড়ে থাকা চামড়ার স্তূপ দেখা গেছে। তবে চৌমহনিতে ও দেওয়ানহাট ও বহদ্দারহাট এলাকায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চামড়া অপসারণ করতে দেখা গেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগকে।
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, গরু জবাইয়ের পরপর যেভাবে রাস্তা-ঘাট পরিস্কার করেছে তার ফলাফল নস্ট করছে চামড়ার কারণে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিবেশ দূষণ আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে।
শেখ ফরিদ উদ্দিন নামে এক আড়তদার বলেন, মৌসুমি ব্যবসায়িদের অভিজ্ঞতা নেই। তারা বেশির ভাগই লবণযুক্ত চামড়ার নির্ধারিত দামের সঙ্গে কাঁচা চামড়ার দাম গুলিয়ে ফেলেছেন। ফলে বাজার পরিস্থিতি না বুঝেই বেশি দামে চামড়া কিনে পরে বিক্রিতে লোকসানে পড়েন।
আগ্রাবাদের চৌমুহনী এলাকায় চামড়া ব্যবসায়ি মো. ফোরকান বলেন, গতকাল চৌমহনি এলাকায় থেকে যারা চামড়া কিনেছেন তারা কেউ পেশাদার চামড়া ব্যবসায়িরা। সংরক্ষণ করার অভিজ্ঞতা নেই। মনে করছেন কমদামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে। সব ব্যবসার তো একটা অভিজ্ঞতা থাকার দরকার। কিন্তু সেটি তাদের ছিলোনা। এতে তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তেমনি পেশাদার চামড়া ব্যবসায়িরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আড়তদাররা সময়মতো চামড়া কিনতে না আসায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চামড়াগুলোতে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি তৈরি হচ্ছে।
জানতে চাইলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়য়ি সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মুসলিম উদ্দিন বলেন, ইতির্পূবে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়িদের সতর্ক করা হয়েছে। সরকার শুধু লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে, কাঁচা চামড়ার নয়। কিন্তু অনেকে এই বিষয়টা না বোকে ইচ্ছে মতো চামড়া কিনেছেন।
তিনি বলেন, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেন, সেটিকে লবণযুক্ত করতে অনেক টাকা খরচ হয়। একটি ২০ ফুটের চামড়ায় প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন ও আড়তের খরচসহ প্রায় ৫০০ টাকা খরচ পড়ে। সেখানে এসব চামড়ার কেনার সময় প্রতি চামড়ার ২০ শতাংশ অর্থ বাদ দিয়ে কেনেন ট্যানারি মালিকরা।
চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির পশুর হাজার হাজার চামড়া অব্যবস্থাপনার কারণে পড়ে রয়েছে। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়াগুলো সংগ্রহ করে আড়তে বিক্রির ব্যবস্থা না থাকায় সেগুলো রাস্তায় ফেলে রেখে চলে গেছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রনব কুমার শর্ম্মা আমার দেশকে বলেন, চৌমুহিতে ফেলে যাওয়ার চামড়াগুলো সকাল থেকে অপসারণ দুপুরের মধ্যে অপসারণ করা হয়েছে, এছাড়া, বহদ্দারহাটের প্রায় শেষ পযার্য়ে রয়েছে। এখন কাজ চলছে বায়েজিদেরগুলোর। সেখানে প্রায় ৫০ হাজারের মতো রয়েছে। আশা করছি রাতের মধ্যে অপসারণ করতে পারবো।
।